গাছের দ্বিগুণ বৃদ্ধিতে ম্যাজিক! ঘরেই বানিয়ে নিন এই ৩টি শক্তিশালী তরল সার

Published On:
শক্তিশালী তরল সার

গতবার আমরা কেঁচো সারের মতো কঠিন সারের গুণাগুণ নিয়ে কথা বলেছিলাম। কঠিন সার গাছের জন্য নিয়মিত খাবারের মতো, যা ধীরে ধীরে মাটিকে উর্বর করে আর গাছকে শক্তি জোগায়।

কিন্তু ভাবুন তো, আমাদের যেমন মাঝে মাঝে খুব দুর্বল লাগলে ডাক্তার ফলের রস বা গ্লুকোজ খাওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে শরীরে সঙ্গে সঙ্গে শক্তি আসে, গাছেরও কি তেমন কিছুর প্রয়োজন হয়?

হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন! গাছের জন্য সেই ‘ইনস্ট্যান্ট এনার্জি ড্রিঙ্ক’ হলো তরল সার। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এর জন্য আপনাকে বাজারে দৌড়াতে হবে না। আপনার রান্নাঘরেই লুকিয়ে আছে এমন কিছু শক্তিশালী তরল সার তৈরির উপকরণ।

চলুন, আজ আমরা রাসায়নিকমুক্ত এবং সহজলভ্য উপাদান দিয়ে ৩টি জাদুকরী তরল সার বানানো শিখি।

১. সরিষার খোল পচা জল – ফুলের রাজার সেরা খাবার

যেকোনো বাঙালি বাগানপ্রেমীর কাছে সরিষার খোল এক পরিচিত নাম। বিশেষ করে ফুল গাছের জন্য এটি যেন এক আশীর্বাদ।

কেন সরিষার খোল এত উপকারী?

সরিষার খোলে গাছের প্রধান তিনটি খাবার—নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), এবং পটাশিয়াম (K) বা NPK ভরপুর মাত্রায় থাকে। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে অনুখাদ্য বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস থাকে, যা গাছের সার্বিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং প্রচুর ফুল আনতে বাধ্য করে।

ধাপে ধাপে বানানোর পদ্ধতি:

  1. উপকরণ: ১০০ গ্রাম সরিষার গুঁড়ো খোল, ১ লিটার জল এবং একটি প্লাস্টিকের বালতি বা মাটির পাত্র।
  2. প্রক্রিয়া: পাত্রের মধ্যে সরিষার খোল এবং জল একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার পাত্রটির মুখ ঢাকা দিয়ে ছায়াযুক্ত জায়গায় রেখে দিন।
  3. অপেক্ষা: গরমকালে ৪-৫ দিন এবং শীতকালে ৭-৮ দিন এভাবে পচতে দিন। প্রতিদিন একবার করে একটি কাঠি দিয়ে মিশ্রণটি নেড়ে দেবেন।
  4. ব্যবহার: সতর্কতা! এই ঘন মিশ্রণটি কখনোই সরাসরি গাছের গোড়ায় দেবেন না। ব্যবহারের আগে, ১ মগ (প্রায় ২৫০ মিলি) খোল পচা জলের সাথে ১০ মগ (প্রায় ২.৫ লিটার) সাধারণ জল মেশান। এবার এই পাতলা মিশ্রণটি গাছের গোড়ায় দিন।

কখন দেবেন: মাসে একবার বা দুবার ব্যবহার করাই যথেষ্ট।

২. সবজির খোসার জল – রান্নাঘরের আবর্জনা থেকে অমৃত

প্রতিদিন আমাদের রান্নাঘর থেকে কত সবজির খোসা ফেলে দেওয়া হয়, তাই না? এই ফেলনা জিনিস দিয়েই আপনি গাছের জন্য একটি ভিটামিন টনিক বানিয়ে ফেলতে পারেন।

কেন সবজির খোসা?

আলুর খোসায় থাকে পটাশিয়াম, কলার খোসায় ফসফরাস আর পেঁয়াজের খোসায় সালফার। এমন নানা রকম সবজির খোসায় থাকে বিভিন্ন অনুখাদ্য, যা রাসায়নিক সারে পাওয়া যায় না। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

ধাপে ধাপে বানানোর পদ্ধতি:

  1. উপকরণ: একটি এয়ারটাইট প্লাস্টিকের বোতল, বিভিন্ন সবজির খোসা (যেমন: আলু, কলা, পটল, লাউ), সামান্য গুড় এবং জল।
  2. প্রক্রিয়া: বোতলের ভেতরে তিন ভাগ সবজির খোসা, এক ভাগ গুড় এবং দশ ভাগ জল দিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে মুখ বন্ধ করে দিন। (উদাহরণ: ৩০০ গ্রাম খোসার জন্য ১০০ গ্রাম গুড় এবং ১ লিটার জল)।
  3. যত্ন: বোতলটিকে ছায়ায় রাখুন। প্রতিদিন একবার করে সাবধানে বোতলের মুখটা হালকা খুলে ভেতরের গ্যাস বের করে দেবেন, নাহলে বোতল ফেটে যেতে পারে।
  4. ব্যবহার: প্রায় ১ মাস পর যখন দেখবেন গ্যাস তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, তখন বুঝবেন আপনার ‘বায়ো-এনজাইম’ তৈরি। ১ লিটার জলে মাত্র ৫-১০ মিলি সার মিশিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে করতে পারেন বা সরাসরি মাটিতেও দিতে পারেন।

৩. চাল ধোয়া জল – ফেলনা নয়, গাছের জন্য আশীর্বাদ

আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার বাড়িতে ভাত রান্না হয় না। আর সেই চাল ধোয়ার জল আমরা বেসিনে ফেলেই দিই। কিন্তু আপনি কি জানেন, এটি গাছের জন্য কতটা উপকারী?

কেন চাল ধোয়া জল?

চালে থাকা স্টার্চ, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি মাটিতে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে, যা গাছের শিকড়কে স্বাস্থ্যকর রাখে।

ব্যবহার কীভাবে করবেন?

এর থেকে সহজ আর কিছু হতে পারে না! কোনো ঝামেলার দরকার নেই। চাল ধোয়ার পর যে সাদা ঘোলা জলটা বের হয়, সেটা ফেলে না দিয়ে সরাসরি আপনার টবের গাছের গোড়ায় ঢেলে দিন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন।

বর্ষাকালে তরল সার ব্যবহারের বিশেষ নিয়ম

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: এখন যেহেতু বর্ষাকাল (জুলাই মাস), তাই সার ব্যবহারে একটু সতর্ক থাকতে হবে।

  • কম ব্যবহার: একটানা বৃষ্টি হলে মাটি এমনিতেই ভেজা থাকে। এই সময়ে অতিরিক্ত তরল সার দিলে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে।
  • সঠিক সময়: যখন দেখবেন ২-৩ দিন বৃষ্টি নেই এবং টবের মাটি কিছুটা শুকিয়েছে, তখনই তরল সার প্রয়োগ করুন।
  • পাতায় স্প্রে: মাটিতে দেওয়ার বদলে পাতায় স্প্রে করা এই সময়ে বেশি নিরাপদ।

শেষ কথা

দেখলেন তো? গাছের যত্ন নেওয়ার জন্য দামি রাসায়নিক সারের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার রান্নাঘর আর একটুখানি ইচ্ছেই যথেষ্ট। এই সহজ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে দেখুন, আপনার সাধের বাগান সবুজ আর ফুলে-ফলে ভরে উঠবে।

আপনারা কোন ঘরোয়া সার ব্যবহার করেন? নিজের অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!

Follow Us On

Leave a Comment

Krishimaya Launcher

Krishimaya

Make an organic environment